ভোটের আয়না
নির্বাচনের মরশুমে গণতন্ত্রের পীঠস্থান গ্রিসের আর্শিতে ভারতের ভোট দেখলেন এই প্রবাসী ভারতীয় ।
Dr. Panchajanya Ghatak |
|
Mon, May 12 2014 |

Temple of godess Athena. Photo: Dr. Ghatak
|
About Dr. Panchajanya A forensic psychiatrist by profession, Panchajanya is a person with interests in music, rock concerts, cooking and of course single malt whisky. He takes breather from a demanding job to make way for his many interests.
 An Enigmatic Beauty  লিস্টিকেল  বরিশালের বাঙাল  My many Kolkata
|
|
বিলেতবাসী হওয়ার আগে ভাবতাম ব্রিটেনের প্রায় সবাই বোধহয় কলকাতাকে এক ডাকে চিনবেন । আঠারো বছরে সেই ভুল ভেঙেছে । কলকাতাকে অনেকভাবে বর্ণনা করতে হয়েছে । যে ভূগোল খানিকটা জানে, মনে আছে তাকে বলেছি “a very big city in Eastern India” । ইতিহাসে যার একটু বেশি উৎসাহ – ১৯৪৭, দেশভাগ এসব জানে, তাকে বলেছি – “Kolkata was the second city of the Empire” ।
ঠিক কবে ? এড়িয়ে গেছি সযত্নে ।
যারা ইতিহাস-ভূগোলে উদাসীন – তাদের বুঝিয়েছি মাদার টেরেসার শহর । কারোরই বুঝতে বেশি সময় লাগে না ।
এথেন্স ছাড়িয়ে যখন আমাদের ট্যাক্সিচালক জিজ্ঞাসা করল ব্রিটেনের আগে আমরা কোথায় থাকতাম ? বললাম ইন্ডিয়া । ভেবেছিলাম প্রশ্ন ওখানেই থেমে যাবে । কিন্তু প্যানাজতিস একটু ভেবে ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করল – ইন্ডিয়ার কোথায় ? দায়সারা ভাবে বললাম কলকাতা ।
যখন ভাবছি এবার কিভাবে প্যানাজতিসকে বোঝাই কলকাতাটা ঠিক কোথায় তখনই সে বলে উঠল – ‘আমি কলকাতায় গেছি । অনেকবার । ‘ গ্রিসের রুক্ষ পাহাড়ি রাস্তায় পেস্তা বাদামের গাছ দেখছিলাম অবাক হয়ে । আচমকা প্যানাজতিসের কথা শুনে নড়েচড়ে বসলাম । জানতে চাইলাম, ‘কবে? কিভাবে?’
প্যানাজতিস বলল ও পুরনো জাহাজি। অনেকবার কলকাতা, মারগাঁও গেছে । কলকাতাই ওর বেশি পচ্ছন্দ। মনে হল না খদ্দেরের মন রাখার জন্য বলছে ।
ষাট পেরনো বলিষ্ঠ চেহারায় ভাঙ্গনের ছাপ । কিন্তু মুখে একটা দৃঢ় ভাব । মনে হল এই মানুষটা কথা কম বলে, কিন্তু বললে ঠিক কথাই বলবে ।
স্মৃতি হাতড়ে প্যানাজতিস বললো জাহাজ খিদিরপুরে ভিড়লে ওরা কয়েকজন মিলে চৌরঙ্গি, পার্ক সার্কাস বেড়াতে যেত । মশলাদার ঝাল খাবারের নেশাটা ধরেছিল ওখান থেকেই ।
সময়টা ৮০র দশকের মাঝামাঝি বলেই মনে হল । পার্ক সার্কাস অঞ্চলে তখন দাপিয়ে ব্যবসা করছে সিরাজ-লখনউ, হোটেল-মিলন । সুরাপ্রেমীদের জন্য উইন্ডসর বা রেখা বার । আরসেলানের আগ্রাসী যাত্রা তখনও শুরু হয়নি ।
কলকাতায় মিছিল আর ধর্মঘটের কথা বেশ মনে আছে প্যানাজতিসের । এখন এথেন্সের রাস্তায় ধর্মঘট আর মিছিল দেখে দেখে গা সওয়া হয়ে গেছে ।
বিরক্ত লাগে না এত মিছিল-টিছিল?
প্যানাজতিস বললেন, “কী করবে মানুষ ? প্রতিবাদ তো করতেই হবে । মানুষ ভোট দিয়ে সরকার গড়ল আর তারাই উঠেপড়ে লেগেছে মানুষের সর্বনাশ করতে । সুযোগ সুবিধা একের পর এক কমে যাচ্ছে । ভেবেছিলাম পেনশন আর জমানো কিছু টাকা দিয়ে চলে যাবে । কিন্তু আবার কাজে নামতে হল ।” প্যানাজতিসের মেয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক । এথেন্স থেকে বেশ খানিকটা দূরে কাজ করে । আর প্যানাজতিস থাকে এথেন্সের আটিকা এলাকার স্পাটা শহরে । ইতিহাসে খুব উৎসাহ ওর । খুব বেশি দূর পড়াশুনা করতে পারেনি, কিন্তু মেয়ের ভেতর দিয়ে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে ।
এথেন্স আর তার চারপাশের এলাকা আটিকায় শুরু হয়েছিল গণতন্ত্রের প্রথম অগ্রযাত্রা । খৃষ্ট পূর্ব ৫০০-র কাছাকাছি হবে । কেমন ছিল সেই প্রথম গণতন্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ? আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে ?
প্যানাজতিসের সঙ্গে লেখক
জানলাম এথেনিয়রা চালু করেছিল ‘direct democracy’ । তাঁরা ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করতেন না । বরং আরো কিছুটা এগিয়ে আইন বা বিভিন্ন বিল সরাসরি নির্বাচন করতেন । ভোটাধিকার অবশ্য খুব বেশি লোকের ছিল না । তিন লাখের মধ্যে হাজার ৫০ মানুষ ভোট দিতে পারতেন । প্রায় ১৭ শতাংশ হবে ।
ভোটারদের প্রভাবিত করতে রাজনৈতিক নাটক-প্রহসন চালু ছিল সেযুগেও । সোলোন, ক্লাইস্থেনিস-এর মতো তাত্ত্বিকদের চিন্তা-ভাবনাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে । পেরিক্লিস সেই সময়কার গণতান্ত্রিক গ্রিসের এক উজ্জ্বল নাম । তাঁর আমলে তৈরি পারথেনন-আক্রোপলিস এখনো গ্রিসের প্রতীক ।
লাখ লাখ মানুষ প্রতি বছর গ্রিসে ছুটে আসেন এই স্থাপত্য দেখতে । তাঁদের সূত্রে গ্রিসের হাঁপিয়ে ওঠা অর্থনীতি কিছুটা অক্সিজেন পাচ্ছে । পেরিক্লিসের-এর দূরদর্শিতা এখনো তাঁর দেশকে সাহায্য করে চলেছে । গণতান্ত্রিক নেতার এমন সুদূরপ্রসারী প্রভাবের দৃষ্টান্ত ইতিহাসে হয়ত খুব বেশি পাওয়া যাবে না ।
সেই গণতন্ত্র ধংস করেছিল আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট । অথচ পেরিক্লিস-এর চেয়ে মানুষ আলেকজান্ডারকে অনেক বেশি মনে রেখেছে ।
গণতন্ত্রের ইতিহাস নিয়ে আড্ডা বেশ জমে উঠেছিল । আমরা চলেছি ডেলফির পথে । প্রায় ১১০ মাইল ফাঁকা রাস্তা । এন্তার গল্পের অবকাশ । বললাম – ওরকম সময়ে শুনেছি ভারতের কপিলাবস্তুতেও গণতন্ত্র চালু ছিল । কপিলাবস্তু বুদ্ধের জন্মস্থান ।
তবে কেমন ছিল সেই গণতন্ত্র – আমার ঠিক জানা নেই ।
প্যানাজতিস বললেন, “ হ্যাঁ, হ্যাঁ ! ইন্ডিয়াতে তো এখন ভোট চলছে । খুব হই হই। বিবিসি আর ফরাসী টিভি খুব দেখায় । ইন্ডিয়ার ছবি দেখতে খুব ভাল লাগে । যদি পুরনো চেনা কোনো জায়গা চোখে পরে যায় !”
প্যানাজতিস নরেন্দ্র মোদি-রাহুল গান্ধীর লড়াইয়ের খবরও ভালোই রাখে । অরবিন্দ কেজরিয়ালকেও ওর বেশ লাগে । তবে এই দুই বিরাট নামের মধ্যে তিনি কি খুব একটা সুবিধে করে উঠতে পারবেন ?
ও ভারতে যায়নি প্রায় ২০ বছর । শুনেছে ইন্ডিয়া নাকি অনেক এগিয়ে গেছে । “এই এগিয়ে যাওয়া যেন চলতে থাকে।”
এবার আলোচনা একটু অন্য দিকে মোড় নিলো । গণতন্ত্রে মানুষের কতটুকু মতপ্রকাশ হয় ?
ব্রিটেনে কন্সারভেটিভদের বিরুদ্ধে লড়াই করলো লিবারেল ডেমোক্র্যাট-রা । অথচ ভোটের পর তারা মিলে মিশে সরকার চালাচ্ছে । যারা কন্সারভেটিভদের বিরুদ্ধে ভোট দেবে বলে লিবারেল ডেমোক্র্যাট-দের বেছে নিয়েছিল । তাদের মত প্রকাশের কতটুকু বজায় ছিল?
মনে হল ভারতেও এরকম হয়েছে বহুবার । হাঁস আর শজারুর লড়াইতে মানুষ ভোট দিয়েছে হাঁস বা শজারুকে – সরকার গড়েছে হাঁসজারু । তবে এথেন্সের সেই ‘direct democracy’-র পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি কালের নিরিখে অনেক এগিয়ে ছিল ?
এথেন্সে মানুষ ভোট দিতেন রঙিন পাথরের বল দিয়ে । ব্যালটের আদিপুরুষ । ভারতে এখন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রে বোতাম টিপে ভোট হয় । যদিও ব্রিটেনে এখনো পেন্সিল দিয়ে ব্যালটে আঁচড় দিয়েই ভোট দিতে হয় । আঙুলে কালির ছাপ পড়ে না ।
ভারতে কি এখনো গণতন্ত্রপন্থীদের প্রতি অতটা ভরসা তৈরী হয়নি ? কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে – তার হিসেব সময় করবে ।
পাহাড়ের ওপর ডেলফির মন্দির দেখা যাচ্ছে । বুঝলাম এখনো অনেকটা চড়াই ভাঙতে হবে ।
Please Sign in or Create a free account to join the discussion
Comments:
Kajari Guha (Thursday, May 15 2014): A very important question you have raised.Let's see.
|
|
|
Popular this month
More from Dr. Panchajanya
|