আমার দেখা প্রিয় চলচ্চিত্র এবং সুচিত্রা সেন
বাঙালি মননে গ্ল্যামার আর এনিগমা-র এমনই এক অভিনব মিশেল হলেন সুচিত্রা সেন, অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার ৩৫ বছর পরেও যাকে ঘিরে বাঙালির রোমান্টিসিশম-এ এতটুকু ঘাটতি নেই ।
Tirthankar Bandyopadhyay |
|
Sun, Jan 12 2014 |

A scene from "Shath Pake Bandha"
|
About Tirthankar Tirthankar has spent much of his professional life working for the BBC. He is the editor of Prabashi Post.
 An Enigmatic Beauty  লিস্টিকেল  বরিশালের বাঙাল  My many Kolkata
|
|
স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষায় প্রিয় চলচ্চিত্র নিয়ে রচনায় পথের পাঁচালীর কথা লিখেছিলাম । তখনো সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখা হয়নি বা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসও পড়িনি । সবে লবটুলিয়া বইহারের সুত্র ধরে আরণ্যকের কথা জেনেছি । রচনা বইয়ের ওপর ভরসা করে সে’বার পরীক্ষায় উতরে গিয়েছিলাম । কলেজে পড়ার সময় নন্দনে প্রথমবার পথের পাঁচালী দেখার সুযোগ হয় ।
চাকরির সন্ধানে আরো একবার ‘প্রিয় চলচ্চিত্র’ নিয়ে রচনা লিখতে হয়েছিল, আর তার ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় কলকাতা দূরদর্শনে দেখানো হল ‘সাত পাকে বাঁধা’ । ততদিনে অবশ্য বেশ কয়েকবার ছবিটা দেখা হয়ে গেছে আর প্রতিবারই মনে হয়েছে অর্চনার (সুচিত্রা সেন) সাথে সুখেন্দুর (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) বিয়েটা টিঁকে গেলে কী ভালোই না হত !
শৈল্পিক নান্দনিকতার দিক থেকে পথের পাঁচালী হয়ত নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে কিন্তু সেখানে আমার মত মধ্যবিত্ত বাঙালি কোথায় ? বরং সাত পাকে বাঁধা-র সাথে মধ্যবিত্ত শ্রেণী অনেক বেশি ‘রিলেট’ করতে পারে । দুপুরে ভাত খাওয়ার পরে যারা ভাতঘুমের পরিবর্তে সিনেমা দেখতে যেতেন, অথবা রোজকার সমস্যা ভুলে থাকতে ‘ছবি’ দেখতেন তাদের কাছে সুচিত্রা সেন যেন এক ধরণের ‘রিলিফ’ । আর তাঁর ছবি কিছুক্ষণের জন্য স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার সাথে রঁদেভুঁ ।
সুচিত্রা সেন-পরবর্তী প্রজন্মের আমি, তাই ৬০-এর বা ৭০-এর দশকের উন্মাদনা দেখার সুযোগ হয়নি, কিন্তু তার কিছুটা আঁচ পাই যখন আজও ‘উত্তর ফাল্গুনী’ বা ‘দ্বীপ জ্বেলে যাই’ দেখতে বসে মা-কাকিমাদের চোখের জলে কোনো খামতি হয় না । টেলিভিশন দেখা মানে নেহাৎ সময় নষ্ট করা মনে করা আমার বাবাও যখন সুচিত্রা সেন-এর ছবি দেখানোর সময় একবার অন্তত টেলিভিশনের সামনে থমকে দাঁড়ান তখন বুঝতে পারি দেশভাগের পরে কঠিন সময়ে সব বাঙালি প্রেমিক-ই কেনো তাদের প্রেমিকাদের মধ্যে সুচিত্রা সেন-কে দেখতে চাইতেন ।
তবে শুধুমাত্র সেই প্রজন্মের কথাই বা বলি কী করে ! ‘আঁধি’র ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে প্রথমবার যখন ছবিটা নন্দনে দেখনো হল, আমরা তখন কলেজে – দল বেঁধে গিয়েছিলাম শুধুমাত্র সুচিত্রা সেন-কে দেখবো বলে । অত্যন্ত খারাপ হিন্দি উচ্চারণ, বয়সের বলিরেখা পরে যাওয়া নায়িকা - তবুও তো তিনি সুচিত্রা সেন !
বাঙালি মননে লাস্য (গ্ল্যামার) আর এনিগমা-র এমনই এক অভিনব মিশেল হলেন সুচিত্রা সেন, অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার ৩৫ বছর পরেও যাকে ঘিরে বাঙালির রোমান্টিসিশম-এ এতটুকু ঘাটতি নেই । সাদা-কালো যুগে সুচিত্রা সেন-এর অভিনীত অধিকাংশ ছবি-ই হয়ত আজকের যুগের সাথে বেমানান, তবুও আজও শুধুমাত্র সুচিত্রা সেন নামটা শুনলেই বাঙালি কাজ ফেলে নস্টালজিয়ায় ভেসে যেতে এক পায়ে রাজি ।
Please Sign in or Create a free account to join the discussion
Comments:
Sudip Dutta (Friday, Mar 21 2014): SUPERB WRITING
|
|
|
Popular this month
More from Tirthankar
|